Thursday, August 20, 2015

বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের সাফল্য-শিশুর নিউমোনিয়ার চিকিৎসায় সাশ্রয়ী উপায়

নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের জন্য স্বল্প খরচে কার্যকর চিকিৎসাপদ্ধতি বের করেছেন আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) একদল বিজ্ঞানী।
নিরবচ্ছিন্ন বায়ুপ্রবাহ ব্যবহার করে নতুন এ পদ্ধতি প্রচলিত চিকিৎসা উপকরণের চেয়ে কার্যকরভাবে রোগীর শ্বাসপ্রশ্বাস চালু রাখে। মূলত এটি বাবল-সিপাপের একটি সাশ্রয়ী বিকল্প কৌশল।

বাংলাদেশি বিজ্ঞানীরা অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষকের সহায়তায় এটি তৈরি করেছেন। এতে ব্যবহার করা হয়েছে শ্যাম্পুর পুরোনো বোতল, মানসম্মত অক্সিজেন সঞ্চালন নল ইত্যাদি। এগুলোর দাম যেমন কম তেমনি সহজলভ্য।
মারাত্মক নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের শ্বাসপ্রশ্বাস চালু রাখতে অক্সিজেন সরবরাহের জন্য বাবল-সিপাপ ব্যবহৃত হয়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) স্বীকৃত স্বল্প প্রবাহের অক্সিজেন প্রয়োগের পদ্ধতির চেয়ে বাংলাদেশে তৈরি বাবল-সিপাপ বেশি কার্যকর।
আইসিডিডিআরবির গবেষণা প্রতিবেদনটি বিশ্বের প্রভাবশালী চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য সাময়িকী দ্য ল্যানসেট-এ গতকাল বুধবার প্রকাশিত হয়েছে।
নিউমোনিয়ার ফলে শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত শিশুদের শ্বাসতন্ত্রে বাবল-সিপাপের মাধ্যমে নিরবচ্ছিন্ন বাতাসের চাপ সরবরাহ করা হয়। হাইপোক্সিমিয়া বা রক্তে অক্সিজেন স্বল্পতায় আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় এটি খুবই কার্যকর। দ্য ল্যানসেট–এ বলা হয়, নিউমোনিয়া ও হাইপোক্সিমিয়া নিরাময়ে উন্নয়নশীল দেশগুলোর সীমিত সুযোগ-সুবিধার মধ্যে এই প্রথম কোনো বিকল্প চিকিৎসাপদ্ধতির কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোয় পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের নিউমোনিয়াজনিত শ্বাসকষ্টের চিকিৎসায় সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছে বাবল-সিপাপ। পশ্চিমা বিশ্বে নবজাতক শিশুর শ্বাসকষ্ট দূর করতে বাবল-সিপাপে অক্সিজেন দিতে যেখানে জনপ্রতি ৪ হাজার ৫০০ থেকে ৭ হাজার ৫০০ টাকা খরচ পড়ে, সেখানে বাংলাদেশে তৈরি এ উপকরণটির জন্য খরচ পড়ে মাত্র ৩৫ থেকে ৫০ টাকা।
গবেষকেরা মনে করেন, সাশ্রয়ী ও সহজপ্রাপ্য উপাদান দিয়ে তৈরি বাবল-সিপাপ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালে ব্যবহারের আগে আরও গবেষণা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে সাফল্য প্রমাণিত হলে বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোর গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবায় ইতিবাচক পরিবর্তন হবে।
অ্যান্টিবায়োটিক এবং স্বল্প প্রবাহের অক্সিজেন প্রয়োগের পরও নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুমৃত্যুর হার প্রায় ১০ শতাংশ। এ সমস্যা মোকাবিলায় বাবল-সিপাপ একটি কার্যকর সমাধান। উন্নত বিশ্বে অনেক আগে থেকেই এটি এক মাসের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কিন্তু স্বল্প আয়ের বা উন্নয়নশীল দেশের পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য কতটা কার্যকর হতে পারে, তা এত দিন অজানা ছিল। সিপাপ পদ্ধতি ব্যবহারের জন্য শ্বাসপ্রশ্বাস চালু রাখার যন্ত্র (রেসপিরেটর) প্রয়োজন। এটি বেশ ব্যয়বহুল হওয়ায় স্বল্প আয়ের দেশগুলোর হাসপাতালে ব্যবহার করা কঠিন। কিন্তু আইসিডিডিআরবির গবেষকেরা যে বাবল-সিপাপ তৈরি করেছেন, এতে রেসপিরেটর ছাড়াই কেবল অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর ব্যবহার করে রোগীকে অক্সিজেন দেওয়া হয়। তাই এটি উন্নত দেশগুলোতে ব্যবহৃত উপকরণের তুলনায় অনেক সাশ্রয়ী। নার্স এবং অন্য স্বাস্থ্যকর্মীরা এটি সহজেই ব্যবহার করতে পারেন। এটি বর্তমানে আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে সফলভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
আইসিডিডিআরবিতে ২০১১ সালের ৪ আগস্ট থেকে ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই পর্যন্ত ২২৫টি শিশুর ওপর গবেষণাটি পরিচালিত হয়। শিশুদের তিনটি দলে ভাগ করা হয়। বাবল-সিপাপ ব্যবহৃত হয়েছে এমন দলে মৃত্যুহার ছিল মাত্র ৪ শতাংশ। কিন্তু স্বল্প প্রবাহ ও উচ্চ প্রবাহের অক্সিজেন দেওয়া হয়েছে এমন দলে মৃত্যুহার তুলনামূলক বেশি, যথাক্রমে ১৫ ও ১৩ শতাংশ।
গবেষণা দলে যুক্ত ছিলেন আইসিডিডিআরবির বিজ্ঞানী মো. যোবায়ের চিশতী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বাবল-সিপাপ সহজলভ্য উপকরণ দিয়ে তৈরি করা সম্ভব। তাই এটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে সহজেই পৌঁছে দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। আরও গবেষণার পর ঢাকাসহ বাংলাদেশের অন্যান্য হাসপাতালে বাবল-সিপাপ ব্যবহার করার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করা যেতে পারে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও সাব-সাহারান আফ্রিকা অঞ্চলসহ যেসব দেশে নিউমোনিয়াজনিত শিশুমৃত্যুর হার বেশি, সেখানকার জন্য এটি খুব কার্যকর হতে পারে।
নিউমোনিয়ায় বিশ্বজুড়ে যত শিশু মারা যায়, তা শিশুমৃত্যুর অন্য যেকোনো একক কারণের তুলনায় বেশি। বাংলাদেশের মতো নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে নিউমোনিয়ায় শিশুমৃত্যুর হার বেশি। ল্যানসেট-এর তথ্যমতে, ২০১১ সালে বিশ্বে নিউমোনিয়ায় প্রায় ১৩ লাখ শিশুর মৃত্যু হয়।

- Source - Prothom Alo
Share:

0 comments:

Post a Comment

Blog Archive

Definition List

Unordered List

Support

সকল