Thursday, May 15, 2014

Bus Accident - চট্টগ্রামের কৃতিসন্তান ডা. সঞ্জিতা বিশ্বাস আমাদের মাঝে আর নেই ।

ছবি: ডা. সঞ্জিতা বিশ্বাস নৌকায় স্বামী ডা. শান্তনু করের সঙ্গে
ছবি: ডা. সঞ্জিতা বিশ্বাস নৌকায় স্বামী ডা. শান্তনু করের সঙ্গে
চট্টগ্রাম: ডা. সঞ্জিতা বিশ্বাস। বয়স আটাশ। নৌকায় স্বামী শান্তনু করের হাত ধরে তোলা একটি ছবি ৭ মে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ওয়ালে পোস্ট করে লিখেছিলেন ‘তোমায় নিয়ে নাও ভাসিয়ে যাব তেপান্তর।’ ৭দিনের ব্যবধানে সত্যি চলে গেলেন সঞ্জিতা। তবে একা। না ফেরার দেশে।


বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেডিকেল কোরে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে মেজর পদবীতে যোগ দিতে চট্টগ্রাম আসছিলেন। শনিবার চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টে যোগ দেওয়ার কথা। মায়ের দোয়া নিতে দু’দিন আগেই ঢাকা থেকে হানিফ পরিবহনের একটি বাসে করে রওনা হন। সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া এলাকায় পৌঁছালে সঞ্জিতাদের বহনকারী বাসের সঙ্গে কাভার্ড ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে  ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান সঞ্জিতা।


sanchita_01পারিবারিক সূত্র জানায়, সঞ্জিতা বিশ্বাস। বাবা সুনীল শান্তি বিশ্বাস। মা সুপ্তি চৌধুরী বিভাগীয় হিসাব নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের সিনিয়র অডিটর। ছোট বেলায় বাবা মারা গেছেন। বড় হয়েছেন মায়ের হাত ধরে। দুই বোন এক ভাইয়ের মধ্যে দ্বিতীয় সঞ্জিতা। বড় ভাই প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রভাষক। ছোট বোন ইউএসটিসি’র ফার্মেসী বিভাগ থেকে পাশ করে বের হয়েছেন। ২০১২ সালে সঞ্জিতার বিয়ে হয় ঢাকা শিশু হাসপাতালের সহকর্মী চিকিৎসক শান্তনু করের সঙ্গে।

২০০০ সালে ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক। চট্টগ্রাম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। ২০০৮ সালে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এমবিবিএস ডিগ্রি ও বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ান অ্যান্ড সার্জন থেকে এফসিপিএস ডিগ্রি অর্জন করেন।

বয়স মাত্র আটাশ। এই অল্প বয়সেই সাফল্যের ঝুঁড়ি বেশ ভারি। ২০১১ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অনারারি মেডিকেল অফিসার হিসেবে কাজ শুরু করেন। ২০১২ সালে ঢাকা শিশু হাসপাতালে অনারারি মেডিকেল অফিসার হিসেবে যোগ দেন। ২০১৩ সালে পেডিয়াট্রিক বিশেষজ্ঞ হিসেবে যোগ দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে(পিজি)। শনিবার সেনাবাহিনীতে মেডিকেল কোরে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে মেজর পদবীতে যোগ দেওয়ার কথা ছিল।

sanchita_03বুধবার রাতেই ঢাকা থেকে রওনা হন। সেনাবাহিনীতে যোগদানের আগে বৃহস্পতিবার মায়ের সাথে দেখা করতে চট্টগ্রামের দামপাড়া ১নং গলির সুফিয়া ভবনের বাসায় আসার কথা। এসেছেন। তবে লাশ হয়ে।

সকালে সুফিয়া ভবনের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, মা সুপ্তি চৌধুরীর আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠে আশপাশের পরিবেশ। স্বামী মারা যাওয়ার পর হাল ছেড়ে দেননি তিনি। প্রতিটি সন্তানকে তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন। সবাইকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলেছেন। তাই মেয়ের এমন চলে যাওয়া কোনভাবে মেনে নিতে পারছেন না। মেয়ের দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পর থেকে পাগল প্রায়। মেয়ের স্মৃতিচারণ করে বিলাপ করছিলেন।

‘আমি আমার মেয়ের মরা মুখ দেখতে পারবো না। আমাকে তোমরা মেরে ফেল।’ এই বলে বিলাপ করছিলেন। বুক চাপড়াচ্ছিলেন। বারবার দেওয়ালের সঙ্গে মাথা ঠুকে আঘাত করার চেষ্টা করছিলেন। স্বজনরাও তাকে ধরে রাখতে পারছিলেন না। তারাও যেন হারিয়ে ফেলেছেন সান্তনা দেওয়ার ভাষা।

সঞ্জিতার চাচা দীপক কান্তি বিশ্বাস  বলেন,‘পরিবারের ছেলে মেয়েদের মধ্যে সঞ্জিতা ছিল সবচেয়ে মেধাবী। ছোট বেলায় তাদের বাবা মারা যায়। তাদের মা সন্তানদের কষ্ট করে বড় করেছেন। ডাক্তারি পড়িয়েছেন। মেয়ে এভাবে চলে যাবে এটা কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেন না।’

তাকে হারিয়ে নির্বাক তার সহপাঠীরাও। কিশোরগঞ্জ জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইনডোর মেডিকেল অফিসার ফাহমিদা মিনু বলেন,‘অবিশ্বাস্য। এটা কোনভাবেই মেনে নিতে পারছি না।’


** কার্ভাড ভ্যান-বাস মুখোমুখি সংঘর্ষ : নারী চিকিৎসকসহ নিহত ২





Share:

0 comments:

Post a Comment

Definition List

Unordered List

Support

সকল